আমরা যে ইন্টারনেট হিসেবে MB ব্যবহার করি, সেইগুলো আসলে কোথায় যায়? আর আমরা যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করি (যেমন: গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি), এই অ্যাপগুলো আমাদের ব্যবহার থেকে কিভাবে আয় করে থাকে?

কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবুও, এই সামান্য বিষয়টা বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা থেকে যায়। অনেক আগে এই বিষয়ে একটি মজার প্রশ্ন পেয়েছিলাম। প্রশ্নটি এমন :

কোন এপস ব্যবহার করে, কোন রেস্টুরেন্ট এর ফ্রী ওয়াই-ফাই থেকে ফ্রী MB নিয়ে, বাসায় গিয়ে ব্যবহার করতে পারবো?
এই প্রশ্ন দেখে মনে করেছিলাম, লোকটি কোন পাগল ছাগল হতে পারে। পরে এই MB ব্যাপারে আরো কিছু প্রশ্ন পেয়েছি। জানা গেলো, বেশিরভাগ মানুষই এই MB জিনিসটা বোঝে না। আজকে, ইনশা-আল্লাহ এত সহজভাবে বোঝাবো যে, গাধা-গরুও জিনিসটা বুঝতে পারবে।

তার আগে, এই প্রশ্নের শেষের অংশের উত্তর দিব। ইউটিউব, ফেসবুক মূলত বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে। ইউটিউব এর মালিক হলো গুগল। গুগল বলতে শুধুমাত্র সার্চ করা চেনেন। আসলে গুগল এর আরো বহুবিধ ব্যবসা আছে।

MB (Mega Bite) অর্থাৎ দশ লক্ষ বাইট (প্রায়)। ওজনের একক KG (কিলোগ্রাম), দূরত্বের একক KM (কিলোমিটার)। তরল পদার্থ পরিমাপের একক, লিটার। ঠিক তেমনই – কম্পিউটার বা মোবাইলে রাখা ফাইল পরিমাপের একক – বাইট। আমরা যেমন বলি, অমুক পাথর দুই কেজি ভারী। যেমন বলি অমুক লাঠি ২ মিটার লম্বা। ঠিক একইভাবে বলি, কম্পিউটার বা মোবাইলে রাখা অমুক ছবিটি ২ MB সাইজের।

শহরের ছেলে-মেয়েরা এই জিনিসটি দেখেনি, কিন্তু বললে বুঝতে পারবে। সেটা হলো, খাল কেটে সেচ। গ্রামে সবার চাষের জমি আছে, কিন্তু নদী অনেক দূরে। ধরুন, আমি ও আপনি সেই গ্রামের চাষি। আমাদের জমিতে পানি আসে না। চাষাবাদ করতে খুব কষ্ট হয়।

একদিন শহর থেকে একটি কোম্পানী এসে, একটি খাল কাটলো। সেই খালের মাধ্যমে নদীর পানি আমাদের জমির কাছাকাছি চলে এসেছে। তবুও আমরা সেই পানি নিতে পারি না, কারণ ওটা অন্যের আয়োজন।

জানা গেলো, শহরের ওই কোম্পানীকে কিছু টাকা দিলে, তারা পানি দিবে। গিয়ে দেখলাম, যারা ওদেরকে টাকা দেয়, তাদের জমি পর্যন্ত একটি ড্রেন বানিয়ে দেয়। নদীর পানি প্রথমে খালে আসে, তারপর খাল থেকে ড্রেন এর মাধ্যমে জমিতে যায়।

এই ব্যবস্থার জন্য ওই কোম্পানী প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা নিতে পারে। আপনি (চাষি) যত ইচ্ছা পানি ব্যবহার করুন। কারণ নদীতে তো পানির অভাব নেই। ওই কোম্পানী টাকা-পয়সা খরচ করে, এই খাল, ড্রেন ইত্যাদি বানিয়েছে। ওরা আপনাকে বিনামূল্যে দিবে না। আপনার কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিবে।

এই গল্পের প্রধান আকর্ষণ হলো – শহরের ওই কোম্পানী, পানির লাইন দেবার জন্য লিটার হিসাবে টাকা নেয়। জমিতে আপনি যত লিটার পানি ব্যবহার করবেন, তত টাকা দিবেন। মাসিক একটা নির্দিষ্ট টাকা নিয়ে আপনার ইচ্ছা মতন প্রচুর পানি দিতে পারতো। নদীতে পানির অভাব নেই। কিন্তু, মাসিক একটা ফিক্সড টাকা না নিয়ে, প্রতি লিটারে টাকা নিচ্ছে কেন? এর একটাই কারণ – এভাবে বেশী টাকা নেওয়া যায়।

আপনার ওই ইন্টারনেট এর MB কেনা জিনিসটা ঠিক এই গল্পের মতন। ইন্টারনেট একটি নদী। মোবাইল কোম্পানী খাল কেটে সেই নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে। এরপর ড্রেন বানিয়ে সেই ইন্টারনেট আপনাকে দিচ্ছে। কিন্তু, টাকা নেবার সময় প্রতি MB তে টাকা নিচ্ছে। কারণ, ওভাবে বেশী টাকা নেওয়া যায়।

যদিও, কিছু ব্যয়বহুল প্যাকেজ আছে, যাতে MB হিসাবে টাকা না নিয়ে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা নেয়। ইচ্ছা মতন ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

আপনার প্রশ্নের উত্তর হলো:

আপনি যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তখন MB কোথাও যায় না। আপনি ইন্টারনেটে কত ডাটা ব্যবহার করেন, সেটা MB হিসেবে পরিমাপ করে আপনার কাছ থেকে টাকা নেয়। টাকার বিনিময়ে আপনাকে ৫০০ MB ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। আপনি ২০০ MB ব্যবহার করার পরে, আরো ৩০০ MB ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। আপনার MB কোথাও যায় না, বরং আপনার কাছে MB আসে।

অবশেষে, রেস্টুরেন্ট এর ফ্রী ওয়াই-ফাই এর উত্তর:

আপনার বাসায় কোন একটা সমস্যার কারণে, বাথরুমের কলে পানি নেই। প্রতিবেশীর বাসায় গিয়ে দেখলেন, ওদের বাথরুমে কলে পানি আছে। আপনি চিন্তা করছেন – প্রতিবেশীর কলটা খুলে, বাসায় নিয়ে যাবেন। তাহলে আপনার বাসায় পানির পাওয়া যাবে।

আপনি একজন বুদ্ধিমান। আপনি তেমন বোকামি চিন্তা করেন না। আপনি জানেন, কলে পানি থাকে না। পানি আসে পাইপ এর সংযোগ এর মাধ্যমে। কলটা খুলে নিয়ে গেলে প্রতিবেশীর পানি পাওয়া যাবে না। প্রতিবেশীর পানি পাওয়ার একটাই উপায় আছে – প্রতিবেশীর বাসা থেকে নিজের বাসা পর্যন্ত পাইপ সংযোগ করা।

রেস্টুরেন্ট এর ইন্টারনেট বাসায় আনার একটাই উপায় – রেস্টুরেন্ট থেকে বাসা পর্যন্ত সংযোগ দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *